হ্যালো বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
ভালো ফসল উৎপাদন করতে জৈব সার ও কম্পোস্ট সারের ভূমিকা অপরিসীম। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জমিতে নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার করুন। জৈব সার ও কম্পোস্ট সার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ও উৎপাদন বাড়ায়।
জৈব সার (Green Manure)
জীবদেহ হতে প্রাপ্ত বা জীবদেহের ধ্বংসাবশেষ হতে প্রাপ্ত/প্রস্তুত সারই জৈব সার। যেমন- গোবর সার, খামারজাত সার, কম্পোস্ট, আবর্জনা সার, খৈল, সবুজ সার, ছাই, হাড়ের গুঁড়া, মাছের গুঁড়া প্রভৃতি জৈব সার।
জৈব সারের উপকারিতা:
১. জৈব সার একাধিক উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের উত্তম উৎস ফলে মাটিতে নিউট্রিয়েন্টের অভাব পূরণ হয়।
২. জমিতে প্রয়োগের পর আনুমানিক ৬-১৮ মাসব্যাপী এর প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু রাসায়নিক সারের পুষ্টি উপাদান দ্রুত কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
৩. রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়ায় ও গাছ কর্তৃক রাসায়নিক সারের গ্রহণক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. মাটির উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৫. মৃত্তিকা গঠন ও সংযুক্তি উন্নত করে।
৬. মাটির বিষাক্ততা দূর করে ফলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
৭. মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে সেচের পানির অপচয় কমায়।
৮. মাটির বায়ু চলাচল ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে মাটি নরম, আলগা ও ঝুরঝুরে হয়।
জৈব সারের শর্তাবলি:
১. জৈব সারে কমপক্ষে ২০% জৈব পদার্থ থাকতে হবে।
২. জৈব সারে ১০-১৫% আর্দ্রতা থাকতে হবে।
৩. জৈব সারে নিকেল, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক ইত্যাদি সহনশীল মাত্রার অতিরিক্ত থাকা যাবে না।
কম্পোস্ট (Compost) সার
নানা প্রকার আবর্জনা, উদ্ভিদ যেমন- আগাছা, কচুরিপানা, কসাইখানার বর্জ্য, ধানের তুষ, আখের ছোবড়া, রান্নাঘরের আবর্জনা এবং প্রাণিজাত পচনশীল উচ্ছিষ্টাংশ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে কম্পোস্ট সার বলা হয়। পারিবারিকভাবে ব্যবহৃত শাকসবজির খোসা, ফসল, জমির বিনষ্ট খড়-আগাছা, কচুরিপানা, শহর-বন্দরের রাস্তাঘাটের জৈব দ্রব্য পচিয়ে উত্তম মানের কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করা যায়।
কম্পোস্ট সারের উপকারিতা:
১. মাটি ঝুরঝুরে এবং নরম করে ফলে মাটি কর্ষণ ও মাটিতে শিকড় চলাচল সহজতর হয়।
২. মাটিতে বায়ু চলাচল এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে মাটির খাদ্য উপাদান গাছের জন্য আরও সহজলভ্য হয়।
৩. মাটিতে খাদ্য উপাদান যোগ করে।
৪. কম্পোস্ট থেকে বিভিন্ন জৈব এসিড (যেমন- হিউমিক এসিড) মাটির অন্যান্য খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত করে গাছের জন্য সহজলভ্য করে তোলে।
৫. মাটির উপকারী অণুজীব সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা দীর্ঘ সময় ধরে মাটির উর্বরতা রক্ষায় সাহায্য করে।
৬. কম্পোস্ট মাটির পিএইচ এর বাফর হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ ক্ষার মাটির পিএইচ কমায় এবং অম্ল মাটির পিএইচ বাড়ায়।
কম্পোস্ট সারের ধরন:
বিভিন্ন ধরনের কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করা যায়। যেমন-
১. খামারজাত কম্পোস্ট: খামারের আবর্জনা পচিয়ে প্রস্তুত করা।
২. পাতা পচা কম্পোস্ট: বাগানের সবুজ লতাপাতা পচিয়ে তৈরি।
৩. কসাইখানা ও শিল্পকারখানার বর্জ্য কম্পোস্ট: শিল্পবর্জ্য থেকে তৈরি।
৪. বসতবাড়ির আবর্জনা কম্পোস্ট: বসতবাড়ির আবর্জনা থেকে তৈরি।
৫. মিউনিসিপালিটি কম্পোস্ট: পৌরসভার আবর্জনা থেকে তৈরি। (৭৪.১% পচনশীল জৈব পদার্থ থাকে)।
Post a Comment