তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) – গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি প্রশ্নোত্তর
এই পোস্টের আলোচনা রয়েছে:
- দৈনন্দিন জীবনে আইসিটির ব্যবহার
- কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস
- সার্চ ইঞ্জিন, ব্রাউজার, URL
- ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশিট
- ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তা
- মাদারবোর্ড, CPU, RAM, ROM
- ই-কমার্স, ই-বুক, ইমেইল
- রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেলিমেডিসিন
১. দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার কি কি?
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করে তুলেছে। আমরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি। অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ই-সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ ঘরে বসেই করা যায়। শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল কন্টেন্ট ও শিক্ষামূলক ভিডিওর মাধ্যমে সহজে পড়াশোনা করতে পারে। চিকিৎসা সেবা, পরিবহন, কৃষি, অফিস–সব ক্ষেত্রেই আইসিটির সুবিধা জীবনকে অনেক বেশি কার্যকর করেছে।
২. কম্পিউটার ভাইরাস কি? কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম লিখ।
কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের ফাইল, সফটওয়্যার বা সিস্টেমকে নষ্ট করতে পারে। এটি নিজে নিজে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ভাইরাস সাধারণত ইমেইল, ইন্টারনেট বা ইনফেকটেড সফটওয়্যার থেকে ছড়ায়। এর ফলে ফাইল নষ্ট হওয়া, কম্পিউটার স্লো হওয়া বা ডেটা চুরি হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। কিছু পরিচিত ভাইরাস হলো: মাইডুম, নিমডা, ট্রোজান, ব্লাস্টার, এবং ওয়ার্ম ভাইরাস।
৩. কম্পিউটার ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি নিজে নিজে ছড়াতে পারে। ভাইরাস সাধারণত ফাইল নষ্ট করে বা কম্পিউটারকে অকার্যকর করে তোলে। এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করে এবং সিস্টেমের গতি কমিয়ে দেয়। কিছু ভাইরাস ডেটা চুরি করে বা ব্যবহারকারীর কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাইরাস প্রায়ই ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার ও র্যানসমওয়্যারের সাথে যুক্ত থাকে।
৪. সার্চ ইঞ্জিন কি? কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিনের নাম লিখ।
সার্চ ইঞ্জিন হলো এমন একটি অনলাইন টুল যা ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ব্যবহারকারী একটি শব্দ বা বাক্যাংশ লিখলে সার্চ ইঞ্জিন প্রাসঙ্গিক লিংক দেখায়। এটি ওয়েবপেজ স্ক্যান করে তথ্য সংগ্রহ করে এবং র্যাংকিং অনুযায়ী ফলাফল প্রদান করে। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, নিউজ ও ওয়েবসাইট সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল, বিং, ইয়াহু, ডাকডাকগো ও বাইডু।
৫. ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলি কি কি?
ইনপুট ডিভাইস হলো যন্ত্র যা কম্পিউটারে তথ্য প্রবেশ করাতে ব্যবহৃত হয়। এর উদাহরণ হলো কিবোর্ড, মাউস, মাইক্রোফোন, স্ক্যানার ও টাচস্ক্রিন। আউটপুট ডিভাইস কম্পিউটার থেকে তথ্য বের করে ব্যবহারকারীকে দেখায় বা শোনায়। যেমন মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার, প্রজেক্টর ইত্যাদি। ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসের সমন্বয়ে কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে পারে।
৬. ওয়েব ব্রাউজার কি? কয়েকটি ওয়েব ব্রাউজারের নাম লিখ।
ওয়েব ব্রাউজার হলো সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট দেখতে সাহায্য করে। এটি ওয়েবপেজ লোড করে এবং HTML, CSS ও অন্যান্য স্ক্রিপ্ট রেন্ডার করে। ব্রাউজারের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, ইমেইল ও অন্যান্য অনলাইন কনটেন্ট দেখা যায়। এটি সার্চ ইঞ্জিনের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত তথ্য খুঁজতে সাহায্য করে। জনপ্রিয় ব্রাউজার হলো গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, এজ, অপেরা ও সাফারি।
৭. কপিরাইট বলতে কি বুঝ?
কপিরাইট হলো কোনো সৃষ্টিশীল কাজের উপর স্রষ্টার আইনি অধিকার। এর মাধ্যমে বই, ছবি, ভিডিও, সফটওয়্যার বা অন্য যে কোনো কাজ অনুমতি ছাড়া নকল করা নিষিদ্ধ হয়। কপিরাইট স্রষ্টার আর্থিক ও নৈতিক স্বত্ব রক্ষা করে। এটি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং মেয়াদ শেষে কাজটি পাবলিক ডোমেইন হিসেবে গণ্য হয়। তাই সৃষ্টিশীল কাজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কপিরাইটের নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
৮. কপিলেফট কি?
কপিলেফট হলো এমন লাইসেন্স ব্যবস্থা যেখানে স্রষ্টা তার কাজ ব্যবহার, পরিবর্তন বা পুনঃপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয়। তবে শর্ত থাকে, পরিবর্তিত কাজও একই লাইসেন্সের অধীনে সবাইকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। এটি সাধারণত মুক্ত সফটওয়্যার বা ওপেন সোর্স প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। কপিলেফট ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যার উন্নয়ন ও বিস্তারে আরও স্বাধীনতা পান। উদাহরণ হিসেবে GNU GPL লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য।
৯. পেলেজারিজম কি?
প্লেজিয়ারিজম মানে হলো অন্যের লেখা, ধারণা বা কাজ নিজের নামে উপস্থাপন করা। এটি একটি অনৈতিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা এবং প্রকাশনায় প্লেজিয়ারিজম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। প্লেজিয়ারিজমের ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয় এবং আইনগত সমস্যাও হতে পারে। তাই অন্যের লেখা ব্যবহার করলে যথাযথ রেফারেন্স দেওয়া জরুরি।
১০. ওয়ার্ড প্রসেসর কি? কয়েকটি ওয়ার্ড প্রসেসরের নাম লিখ।
ওয়ার্ড প্রসেসর হলো এমন সফটওয়্যার যার মাধ্যমে লেখা তৈরি, সম্পাদনা ও ছাপানো যায়। এতে বানান ঠিক করা, প্যারাগ্রাফ সাজানো, টেবিল যোগ করা ইত্যাদি কাজ সহজে করা যায়। অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়ার্ড প্রসেসর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। জনপ্রিয় ওয়ার্ড প্রসেসর হলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, গুগল ডকস, লিব্রে-অফিস রাইটার। ওয়ার্ড প্রসেসরের মাধ্যমে ডিজিটাল ডকুমেন্ট তৈরি অত্যন্ত সহজ।
১১. কম্পিউটারের কিবোর্ড কিভাবে পরিষ্কার করতে হয়?
কিবোর্ড পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে কম্পিউটার বন্ধ করে প্লাগ খুলে নিতে হয়। এরপর কিবোর্ড উল্টো করে ধরে হালকা ঝাঁকালে ধুলা ও ছোট কণা বের হয়ে আসে। নরম ব্রাশ বা ব্লোয়ার দিয়ে ফাঁকের ধুলা পরিষ্কার করা যায়। ভেজা কাপড় বা অ্যালকোহল মুছা ব্যবহার করে বোতামের উপরিভাগ পরিষ্কার করা উচিত। কিবোর্ডে পানি ঢালা বা ভিজে কাপড় বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
১২. এন্টিভাইরাস কি? কয়েকটি এন্টিভাইরাসের নাম লিখ।
এন্টিভাইরাস হলো এমন সফটওয়্যার যা কম্পিউটারকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার থেকে রক্ষা করে। এটি সিস্টেম স্ক্যান করে ক্ষতিকারক ফাইল শনাক্ত ও মুছে ফেলে। এন্টিভাইরাস রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন দিয়ে ভাইরাসকে ছড়াতে বাধা দেয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় এটি ফিশিং ও হ্যাকিং থেকেও সুরক্ষা দেয়। জনপ্রিয় এন্টিভাইরাস হলো কাসপারস্কি, অ্যাভাস্ট, বিটডিফেন্ডার, নর্টন ইত্যাদি।
১৩. ওয়ার্ড প্রসেসরে টাইপ করার জন্য শর্টকাট কিগুলো কি কি?
ওয়ার্ড প্রসেসরে দ্রুত কাজ করার জন্য বিভিন্ন শর্টকাট কী ব্যবহৃত হয়। যেমন Ctrl + C কপি, Ctrl + V পেস্ট এবং Ctrl + X কাট করতে ব্যবহৃত হয়। লেখা বোল্ড করতে Ctrl + B, ইটালিক করতে Ctrl + I এবং আন্ডারলাইন করতে Ctrl + U ব্যবহৃত হয়। Ctrl + S চাপলে ডকুমেন্ট সেভ হয় এবং Ctrl + P চাপলে প্রিন্ট দেওয়া যায়। শর্টকাট ব্যবহারে সময় বাঁচে এবং কাজ আরও সহজ হয়।
১৪. স্প্রেডশিট কি? এর ব্যবহার লিখ।
স্প্রেডশিট হলো এমন সফটওয়্যার যেখানে সারি ও কলাম ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ ও গণনা করা যায়। এটি হিসাব-নিকাশ, চার্ট তৈরি এবং ডেটা অ্যানালাইসিসে অত্যন্ত কার্যকর। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও অফিসে স্প্রেডশিট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এক্সেল বা গুগল শিটসে নানা ফর্মুলা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা যায়। রিপোর্ট তৈরিও খুব সহজে করা সম্ভব।
১৫. পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন কি? এর ব্যবহার লিখ।
পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন হলো স্লাইড আকারে তথ্য উপস্থাপনার সফটওয়্যার। এতে লেখা, ছবি, ভিডিও ও চার্ট যোগ করে আকর্ষণীয়ভাবে তথ্য দেখানো যায়। শিক্ষা, অফিস, ব্যবসা ও সেমিনারে এটি প্রচুর ব্যবহৃত হয়। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বক্তা সহজে বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারেন। এটি আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৬. শিক্ষা বিষয়ক কয়েকটি ওয়েবসাইটের নাম লিখ।
শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট ও নোট প্রদান করে। এগুলো অনলাইন ক্লাস, ভিডিও লেকচার ও বই পড়ার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু শিক্ষা ওয়েবসাইট হলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB), এসএসসি ও এইচএসসি প্রস্তুতি সাইট, শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট সাইট। এছাড়া ইউটিউবের বিভিন্ন শিক্ষামূলক চ্যানেলও শিক্ষার্থীদের অনেক সাহায্য করে। এসব সাইট ব্যবহার করে পড়াশোনা আরও সহজ হয়।
১৭. মাইক্রোসফট অফিসের অ্যালাইনমেন্ট কত প্রকার ও কি কি?
মাইক্রোসফট অফিসে সাধারণত চার ধরনের অ্যালাইনমেন্ট রয়েছে। Left alignment-এ লেখা বাম দিকে থাকে এবং এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। Center alignment লেখাকে মাঝখানে রাখে, যা শিরোনামে ব্যবহৃত হয়। Right alignment লেখাকে ডানদিকে স্থাপন করে। এছাড়াও Justify alignment লেখাকে দুই প্রান্তে সমান করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেয়।
১৮. ইন্টারনেট কি? শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার লিখ।
ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি। এটি তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ এবং অনলাইন সেবা গ্রহণে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস, ভিডিও টিউটোরিয়াল, ই-বুক ও নোট সহজে পায়। শিক্ষকরা অনলাইনে পাঠ পরিকল্পনা করতে এবং শিক্ষামূলক কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন।
১৯. নেটওয়ার্ক কি? বিভিন্ন প্রকার নেটওয়ার্কের নামগুলি লিখ।
নেটওয়ার্ক হলো দুই বা ততোধিক ডিভাইসের পারস্পরিক সংযোগ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ডেটা ও তথ্য দ্রুত আদান-প্রদান সম্ভব হয়। নেটওয়ার্ক আকার ও পরিধি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন LAN (Local Area Network), MAN (Metropolitan Area Network) এবং WAN (Wide Area Network)। বড় প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট সেবায় নেটওয়ার্ক অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
২০. প্রসেসর কি? প্রসেসরের উপাদানগুলি কি কি?
প্রসেসর হলো কম্পিউটারের মস্তিষ্ক, যা সব নির্দেশনা প্রক্রিয়া করে। ব্যবহারকারীর দেওয়া ডেটা ও কমান্ড প্রসেসর বুঝে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করে। প্রধান উপাদান হলো ALU (Arithmetic Logic Unit), CU (Control Unit) এবং রেজিস্টার। ALU গাণিতিক ও যুক্তিক কাজ করে, CU নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা দেয়। রেজিস্টার অস্থায়ী ডেটা সংরক্ষণ করে।
২১. মেমোরি কি? মেমোরি কত প্রকার ও কি কি?
মেমোরি হলো কম্পিউটারে ডেটা সংরক্ষণের স্থান। এটি দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত—প্রাথমিক মেমোরি এবং গৌণ মেমোরি। প্রাথমিক মেমোরির মধ্যে RAM ও ROM রয়েছে, যা দ্রুত ডেটা সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। গৌণ মেমোরি যেমন হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ, SSD দীর্ঘমেয়াদি ডেটা সংরক্ষণ করে। মেমোরি কম্পিউটারকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
২২. র্যাম ও রম এর মধ্যে পার্থক্য কি?
RAM হলো অস্থায়ী মেমোরি যা কম্পিউটার চলার সময় ডেটা সংরক্ষণ করে। কম্পিউটার বন্ধ হলে RAM-এর ডেটা মুছে যায়। অন্যদিকে ROM হলো স্থায়ী মেমোরি, যেখানে নির্দেশাবলী স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। RAM দ্রুত ডেটা প্রসেসিং করে, আর ROM-এর ডেটা পরিবর্তন করা যায় না। দুটিই কম্পিউটারের কাজের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
২৩. পিডিএফ কি?
PDF (Portable Document Format) হলো এমন ফাইল ফরম্যাট যা যেকোনো ডিভাইসে একইভাবে দেখা যায়। এতে লেখা, ছবি, চার্ট এবং ডিজাইন নষ্ট হয় না। অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন ফরমে PDF ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি সহজে শেয়ার করা যায় এবং সিকিউরিটি দেওয়ার সুযোগ থাকে। PDF রিডার সফটওয়্যার ব্যবহার করে এটি খোলা যায়।
২৪. ওয়েবসাইট কি?
ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেটে থাকা এক বা একাধিক ওয়েবপেজের সমষ্টি। একটি নির্দিষ্ট URL দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায়। এতে লেখা, ছবি, ভিডিও ও বিভিন্ন তথ্য থাকে। শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদনসহ নানা কাজে ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। এটি সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
২৫. ডেটা কমিউনিকেশন কি?
ডেটা কমিউনিকেশন হলো দুই ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া। এতে ডেটা প্রেরণ, গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। মডেম, রাউটার ও নেটওয়ার্ক কেবলের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়। সঠিক গতি, নির্ভরযোগ্যতা ও সুরক্ষা ডেটা কমিউনিকেশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ইন্টারনেট মূলত ডেটা কমিউনিকেশনের ওপর নির্ভর করে।
২৬. HTML কি?
HTML হলো HyperText Markup Language, যা ওয়েবপেজ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত টেক্সট, ছবি, লিংক ও অন্যান্য উপাদান সাজায়। প্রতিটি উপাদান ট্যাগের মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়। ওয়েব ব্রাউজার HTML কোড পড়ে সঠিকভাবে দেখায়। ওয়েব ডিজাইনের প্রথম ধাপ হলো HTML শেখা।
২৭. URL কি?
URL (Uniform Resource Locator) হলো ইন্টারনেটে একটি ওয়েবপেজের ঠিকানা। এর মাধ্যমে ব্রাউজার নির্দিষ্ট সাইটে পৌঁছায়। URL সাধারণত https:// দিয়ে শুরু হয়। এতে ডোমেইন নাম, সার্ভার এবং ফাইল পথ থাকে। URL ছাড়া ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
২৮. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি? কয়েকটি নাম লিখ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। এতে ছবি, ভিডিও, বার্তা ও তথ্য শেয়ার করা যায়। আধুনিক সমাজে এটি তথ্য প্রচার ও বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হলো ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও টুইটার। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষামূলক কনটেন্ট এখান থেকে পেতে পারে।
২৯. ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড কি?
ডেবিট কার্ড হলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকাই ব্যবহার করার কার্ড। কেনাকাটার সময় টাকা সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে যায়। অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক থেকে ঋণের মতো টাকা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। মাসের শেষে বিল পরিশোধ করতে হয়। উভয় কার্ড অনলাইন পেমেন্ট, ATM লেনদেন ও POS মেশিনে ব্যবহৃত হয়।
৩০. ভার্চুয়াল ক্লাসরুম কি?
ভার্চুয়াল ক্লাসরুম হলো অনলাইন শিক্ষার একটি ব্যবস্থা। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। ভিডিও ক্লাস, স্ক্রিন শেয়ার, চ্যাট ও নোট প্রদান করা যায়। দূরশিক্ষা ও অনলাইন শিক্ষার আধুনিক রূপ এটি। করোনা মহামারির সময় ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩১. কোন ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার নিয়ম কি কি?
ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে প্রথমে প্রিন্টার সঠিকভাবে সংযুক্ত আছে কি না নিশ্চিত হতে হয়। এরপর ফাইল থেকে Print অপশন সিলেক্ট করতে হয়। এখানে কপি সংখ্যা, পেজ সিলেকশন, কাগজের ধরন ইত্যাদি নির্ধারণ করা যায়। Preview দেখে নিশ্চিত হওয়া ভালো। শেষে Print বাটন চাপলে প্রিন্ট শুরু হয়।
৩২. প্রোগ্রাম কি?
প্রোগ্রাম হলো কম্পিউটারের বুঝার মতো নির্দেশনার সমষ্টি। এটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে লেখা হয়। প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। কম্পিউটার শুধুমাত্র প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করতে পারে। সফটওয়্যার তৈরির মূল ভিত্তি হলো প্রোগ্রামিং।
৩৩. অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্ট এর মধ্যে পার্থক্য লিখ।
অ্যালগরিদম হলো ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানের লিখিত নির্দেশনা। এটি সাধারণ ভাষায় লেখা হয়। ফ্লোচার্ট হলো সেই নির্দেশনার চিত্ররূপ। ফ্লোচার্টে বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করে কাজের ধাপ দেখানো হয়। অ্যালগরিদম বিশদ নির্দেশনা দেয়, আর ফ্লোচার্ট তা সহজে বোঝার মতো করে উপস্থাপন করে।
৩৪. মাইক্রোসফট অফিসে একটি ডকুমেন্ট কিভাবে ওপেন করতে হয়?
মাইক্রোসফট অফিসে ডকুমেন্ট ওপেন করতে File মেনু থেকে Open নির্বাচন করতে হয়। এরপর ফাইল লোকেশন থেকে ফাইলটি সিলেক্ট করতে হয়। ডাবল-ক্লিক করলেও ফাইল খুলে যায়। সাম্প্রতিক ফাইল Recent Files থেকে দ্রুত খোলা যায়। একই পদ্ধতি Word, Excel, PowerPoint সবটিতেই প্রযোজ্য।
৩৫. কিভাবে একটি ফোল্ডার তৈরি করতে হয়?
ফোল্ডার তৈরি করতে ডেস্কটপ বা যেকোনো ড্রাইভে রাইট-ক্লিক করতে হয়। এরপর New → Folder নির্বাচন করতে হয়। ফোল্ডার তৈরি হলে নাম পরিবর্তন করা যায়। ফাইল সংগঠিত রাখতে ফোল্ডার অত্যন্ত জরুরি। এতে কাজ আরও সহজ ও সুশৃঙ্খল হয়।
৩৬. বাংলা লেখার সফটওয়্যারগুলো কি কি?
বাংলা লেখার জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অভ্র কীবোর্ড সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া বিজয় কীবোর্ড, ইউনিজয় লেআউট এবং গুগল ইনপুট টুলও ব্যবহৃত হয়। এসব সফটওয়্যার বাংলা টাইপিং সহজ করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া হাউসে এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৩৭. অভ্রতে যুক্তবর্ণগুলো লেখার নিয়ম কি কি?
অভ্রতে যুক্তবর্ণ লেখার জন্য সাধারণত “্” (হসন্ত) ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: ক + ্ + ষ = ক্ষ। রেফ লেখার জন্য “র্” ব্যবহার করতে হয়। টাইপিং সহজ করার জন্য অভ্রতে অপশন ও লেআউট কাস্টমাইজ করা যায়। যুক্তবর্ণ লেখার নিয়ম খুব সহজ এবং সবাই দ্রুত শিখতে পারে।
৩৮. কয়েকটি বাংলা ফন্টের নাম লিখ।
কয়েকটি জনপ্রিয় বাংলা ফন্ট হলো সোলাইমানলিপি, কালপুরুষ, লোহিত বাংলা, রূপালি ও নিকষা। অভ্র কীবোর্ডে এসব ফন্ট সহজে ব্যবহার করা যায়। বাংলা ওয়েবসাইট ও বই প্রকাশনায় এগুলো ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। ফন্ট লেখাকে সুন্দর ও পাঠযোগ্য করে তোলে। ডিজিটাল কনটেন্টেও বাংলা ফন্টের ব্যবহার বাড়ছে।
৩৯. কিভাবে একটি ইমেইল একাউন্ট তৈরি করতে হয়?
ইমেইল একাউন্ট তৈরি করতে প্রথমে Gmail বা Yahoo সাইটে যেতে হয়। এরপর Create Account অপশন সিলেক্ট করতে হয়। নাম, জন্মতারিখ, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। ফোন নম্বর ভেরিফাই করলে অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যায়। এরপর ইমেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা সম্ভব।
৪০. ই-কমার্স কি?
ই-কমার্স হলো অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার ব্যবস্থা। এতে গ্রাহক ঘরে বসেই পণ্য নির্বাচন ও অর্ডার করতে পারে। অনলাইন পেমেন্ট, ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যবহৃত হয়। ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য প্রচার করতে পারে। জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হলো দারাজ, আমাজন, আলিবাবা ইত্যাদি।
৪১. ই-বুক কি?
ই-বুক হলো বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ। এটি মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারে পড়া যায়। ই-বুক সহজে সংরক্ষণ, শেয়ার ও বহন করা যায়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-বুক পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। PDF, EPUB ইত্যাদি ফরম্যাটে ই-বুক পাওয়া যায়।
৪২. মাদারবোর্ড কি?
মাদারবোর্ড হলো কম্পিউটারের প্রধান সার্কিট বোর্ড। এতে প্রসেসর, মেমোরি, পাওয়ার ইউনিট, USB পোর্টসহ সব অংশ সংযুক্ত থাকে। মাদারবোর্ড সকল ডিভাইসকে সমন্বয় করে কাজ করতে সাহায্য করে। এটি ছাড়া কম্পিউটার চালানো যায় না। বিভিন্ন ধরনের মাদারবোর্ডে বিভিন্ন ফিচার থাকে।
৪৩. CPU কি?
CPU (Central Processing Unit) হলো কম্পিউটারের প্রধান প্রসেসর। এটি নির্দেশনা গ্রহণ, বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে। CPU-এর গতি GHz দ্বারা মাপা হয়। আধুনিক CPU-তে একাধিক কোর থাকে, যা দ্রুত কাজ করে। ইন্টেল ও এএমডি জনপ্রিয় CPU নির্মাতা।
৪৪. হার্ডডিস্ক কি?
হার্ডডিস্ক হলো কম্পিউটারের গৌণ মেমোরি যেখানে স্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। এটি ম্যাগনেটিক ডিস্কের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করে। হার্ডডিস্কে গিগাবাইট থেকে টেরাবাইট পর্যন্ত ডেটা রাখা যায়। কম্পিউটার চালানোর জন্য অপারেটিং সিস্টেমও হার্ডডিস্কে থাকে। বর্তমানে SSD হার্ডডিস্কের চেয়ে দ্রুত কাজ করে।
৪৫. টেলিমেডিসিন কি?
টেলিমেডিসিন হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান পদ্ধতি। রোগী দূরে থেকেও ডাক্তারদের সাথে ভিডিও কল বা অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে। রিপোর্ট দেখানো, প্রেসক্রিপশন পাওয়া ও স্বাস্থ্য পরামর্শ নেওয়া যায়। গ্রামের মানুষ এতে বেশি উপকার পায়। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় টেলিমেডিসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪৬. ক্রায়োসার্জারি কি?
ক্রায়োসার্জারি হলো বরফজাতীয় ঠান্ডা ব্যবহার করে টিস্যু নষ্ট করার সার্জারি। এতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। টিউমার অপসারণ, ত্বকের দাগ দূর করা ইত্যাদিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রুত, কম ব্যথাযুক্ত এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। হাসপাতালগুলোতে এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি।
৪৭. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হলো এমন প্রযুক্তি যা মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে ও শিখতে পারে। এটি ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রোবট, স্বচালিত গাড়ি, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট—all AI-এর উদাহরণ। চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা—সবক্ষেত্রে AI ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির মূল চালিকা শক্তি।
৪৮. বিশ্বগ্রাম কি?
বিশ্বগ্রাম হলো আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো পৃথিবীকে একটি ছোট গ্রামের মতো মনে হওয়ার ধারণা। ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তি দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো ঘটনার খবর মুহূর্তেই জানা যায়। যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষা আন্তর্জাতিকভাবে সহজ হয়েছে। বিশ্বগ্রাম ধারণা গ্লোবালাইজেশনকেও ত্বরান্বিত করেছে।
৪৯. রোবট কি? রোবটের ব্যবহার লিখ।
রোবট হলো এমন যন্ত্র যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এটি নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে। শিল্প, চিকিৎসা, গৃহস্থালি, মহাকাশ গবেষণায় রোবট ব্যবহৃত হয়। বিপজ্জনক ও কঠিন কাজ রোবট সহজেই করতে পারে। আধুনিক সমাজে রোবটের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
৫০. তথ্য প্রযুক্তি কি? এর উপকারিতা লিখ।
তথ্য প্রযুক্তি হলো তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও আদান-প্রদানের প্রযুক্তি। এটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সফটওয়্যার ও ডিজিটাল সিস্টেমের সমন্বয়ে কাজ করে। তথ্য প্রযুক্তির ফলে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা—সব ক্ষেত্রে উন্নতি এসেছে। এটি সমাজ ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Post a Comment