লোড হচ্ছে...

সর্বশেষ

ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস।

ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলির নাম ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল।

Input and Output devices


সাউন্ড কার্ড (Sound Card): 

আজকের দিনের আইসিটি যন্ত্রগুলোতে যে যন্ত্রটি অবশ্যই থাকে তা হলো সাউন্ড কার্ড। এটি একই সাথে ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এটি সাধারণত সফটওয়্যার দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়।
বেশিরভাগ সাউন্ড কার্ড ডিজিটাল উপাত্তকে এনালগ একটি শব্দে রূপান্তর করে। আউটপুট সিগন্যালগুলোকে অ্যামপ্লিফায়ারের সাথে যুক্ত করে হেডফোন বা স্পিকারের সাহায্যে শব্দ শোনা যায়। প্রায় সব সাউন্ড কার্ডেই ইনপুট দেওয়ার কানেক্টার এবং আউটপুট দেওয়ার কানেষ্টার থাকে। বাইরে থেকে মাইক্রোফোন বা অন্য কোনো ইনপুট দেওয়ার যন্ত্রে ইনপুট দিলে সাউন্ড কার্ড তা প্রসেসরে পাঠায় এবং প্রসেসর সেই ইনপুটকে প্রক্রিয়া করে আবার সাউন্ড কার্ডে পাঠায়, সেখান থেকে আউটপুট অংশের মাধ্যমে হেডফোন বা স্পিকারে আমরা শব্দ শুনতে পাই।

সাউন্ড কার্ড (মোজার্ট ১৬)

ইদানীং কালে বেশিরভাগ সাউন্ড কার্ডই মাদারবোর্ডে সংযুক্ত (Built in) অবস্থায় থাকে। আলাদা করে সাউন্ড কার্ড লাগাতে হয় না। সাউন্ড কার্ডের মাধ্যমেই মাল্টিমিডিয়া পূর্ণতা পায়। গান শোনা, চলচ্চিত্র উপভোগ করা ছাড়াও সব গেমস্ আমরা শব্দসহ উপভোগ করি সাউন্ড কার্ডের কারনেই। তবে প্রফেশনাল কাজে ব্যবহৃত সাউন্ড কার্ড সাধারণত আলাদা করে মাদারবোর্ডে লাগাতে হয়।

গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card): 

আমরা যখন কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করো তখন পর্দায় ছবি দেখেই নানা নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এখন প্রশ্ন হলো এ ছবি পর্দায় দেখা যায় কীভাবে? আসলে কাজটি করে থাকে গ্রাফিক্স কার্ড। এটিকে অনেক সময় ভিডিও কার্ড, ডিসপ্লে কার্ড বা গ্রাফিক্স এডাপ্টার নামে ডাকা হয়।
মাদারবোর্ডে এই কার্ড লাগানোর জন্য আলাদা স্লট বা সকেট থাকে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাদারবোর্ডেই এ কার্ড সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। আর অত্যাধুনিক প্রসেসরগুলোতে এ ভিডিও বা ডিসপ্লে চিপ সংযুক্ত থাকে বা অন্য কথায় প্রসেসরগুলো কোনো কার্ড ছাড়াই আমাদের ছবি প্রদর্শন করতে পারে।
সব গ্রাফিক্স কার্ডই আমাদের দ্বিমাত্রিক (২ডি) ছবি দেখাতে পারে। তবে বর্তমানে ত্রিমাত্রিক (৩ডি) ছবি দেখাতে সক্ষম গ্রাফিক্স কার্ডও পাওয়া যায়। অবশ্য ত্রিমাত্রিক ছবি দেখতে হলে আমাদের ত্রিমাত্রিক ছবি দেখাতে সক্ষম মনিটর প্রয়োজন হবে। গ্রাফিক্স কার্ডের এ উন্নতির ফলে আজকের দিনে আমরা একেবারে জীবন্ত ও বাস্তব ছবি দেখতে পারছি।
সাউন্ড কার্ডের মতো গ্রাফিক্স কার্ডেও ইনপুট ও আউটপুট কানেক্টার থাকে। এছাড়াও গ্রাফিক্স কার্ডে গেমস্ খেলার জন্য আলাদা পোর্ট থাকে। ফলে সহজেই গেমস্ খেলার জন্য জয়স্টিকস্ বা অন্যান্য যন্ত্র সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।

টাচ স্ক্রিন (Touch screen):

টাচস্ক্রিন হল এমন এক ধরনের ডিসপ্লে যা ব্যবহারকারীর কাছ থেকে টাচ বা আঙ্গুলের স্পর্শ ইনপুট সনাক্ত করতে পারে এবং মনিটরের মত স্ক্রিনে ফলাফলও প্রদর্শন করতে পারে। এটি একটি ইনপুট ডিভাইস (টাচ বা স্পর্শ প্যানেল) এবং একটি আউটপুট ডিভাইস (ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে) উভয়ই নিয়ে গঠিত। অর্থাৎ এটি ইনপুট-আউপুট ডিভাইস। টাচস্ক্রিন সাধারণত স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানায় অটোমেশন কাজে টাচস্ক্রিনের ব্যবহার দেখা যায়।

মনিটর (Monitor): 

মনিটর মূলত একটি আউটপুট ডিভাইস। এখন এমন মনিটরও পাওয়া যায় যা একইসাথে ইনপুট ডিভাইস হিসেবেও কাজ করতে পারে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছ এখানে টাচস্ক্রিন মনিটরের কথা বলা হচ্ছে। আজকাল টাচস্ক্রিনসহ মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা সাধারণ মনিটর সবখানেই পাওয়া যায়। তোমাদের অনেকেই হয়তো এরমধ্যে এসব ব্যবহারও করে ফেলেছে।
সিআরটি মনিটর, এলসিডি মনিটর ও এলইডি মনিটর
আমাদের বাসার টেলিভিশনের সাথে মনিটরের তেমন পার্থক্য নেই। নানা আকৃতির মনিটর পাওয়া যায়। মনিটরের কর্ণের দৈর্ঘ্যকে মনিটরের সাইজ হিসেবে ধরা হয়। আগে সিআরটি বা ক্যাথোড রে টিউব (Cathod Ray Tube) মনিটরই সবাই ব্যবহার করত। এখন পাতলা এলসিডি (লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে) বা এলইডি (লাইট ইমিটিং ডায়োড) পর্দার মনিটর ব্যবহৃত হয়। এগুলো হালকা পাতলা। দেখতে আকর্ষণীয় এবং বিদ্যুৎ খরচ সিআরটি মনিটরের তুলনায় অনেক কম।

প্রিন্টার (Printer): 

মনিটরের পর যে আউটপুট যন্ত্রটি আমাদের বেশি প্রয়োজন হয় তা হচ্ছে প্রিন্টার। কম্পিউটারে প্রসেসিং করার পর এর আউটপুট কাগজে ছাপানোর জন্য আমাদের প্রিন্টার ব্যবহার করতে হয়। ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিও আমরা প্রিন্টারে প্রিন্ট করে থাকি। 

সাধারণত তিন ধরনের প্রিন্টার পাওয়া যায়।

ক. ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার: এটি প্রথম দিকের প্রিন্টার। ছাপার ব্যয় অনেক কম সেজন্য এ প্রিন্টারটি এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এটি দিয়ে নিখুঁত ছাপার কাজ করা যায় না। তাছাড়া এটির ছাপার গতি অনেক ধীর।

খ. ইঙ্কজেট প্রিন্টার: 

স্বল্পদামি প্রিন্টার হিসেবে এটি বহুল ব্যবহৃত। সাধারণত ব্যক্তিগত কাজে ইঙ্কজেট প্রিন্টার বেশি ব্যবহার করা হয়। এটিতে তরল কালি ব্যবহৃত হয়। এটি দিয়ে নিখুঁত ছাপার কাজ করা যায়। বিশেষ করে ছবি প্রিন্ট করার কাজে ইঙ্কজেট প্রিন্টারের ব্যবহার অধিক। তবে এর ছাপার ব্যয় তুলনামূলক বেশি।

গ. লেজার প্রিন্টার: 

এ ধরনের প্রিন্টারে লেজার রশ্মির সাহায্যে কাগজে লেখা ছাপা হয়। লেজার প্রিন্টারের ছাপার গতি ও মান অত্যন্ত উন্নত ও নিখুঁত। সাধারণ ছাপা এবং ছবি প্রিন্ট উভয় ধরনের কাজেই এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এক সময় ব্যয়বহুল থাকলেও প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এটি এখন অনেক ব্যয়-সাশ্রয়ী।
এছাড়াও প্লটারও একটি ছাপার যন্ত্র। আর্কিটেকচারাল নকশা, মানচিত্র বা গ্রাফের নিখুঁত ও অনেক বড় কাগজে প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।

আউটপুট ডিভাইস

স্পিকার: 

গান শোনার যন্ত্রগুলোর সাথে যা অবশ্যই সংযুক্ত থাকে তাই হলো স্পিকার। স্পিকার আমাদের সব ধরনের শব্দ শোনাতে পারে। এটি একটি আউটপুট ডিভাইস। মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটারের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র হলো স্পিকার। স্পিকার কম্পিউটারের ভিতরে স্থাপিত অবস্থায় থাকতে পারে আবার বাইরে লাগানো যায়। ভালো মানের শব্দ পেতে হলে আমাদের ভালো স্পিকার ব্যবহার করতে হয়। সাউন্ড কার্ড বা রিসিভার থেকে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে শ্রবণযোগ্য শব্দতরঙ্গে রূপান্তরিত করা স্পিকারের কাজ।

হেডফোন: 

হেডফোন হলো কানের কাছাকাছি নিয়ে শব্দ শোনার যন্ত্র। একে অনেকে এয়ারফোন বা হেডসেট নামেও ডেকে থাকে। এটিও আউটপুট ডিভাইস। সাধারণত মোবাইল ফোন, সিডি/ডিভিডি প্লেয়ার, এমপিথ্রি/এমপিফোর প্লেয়ার, ল্যাপটপ বা পার্সোনাল কম্পিউটারের সাথে ব্যবহার করা হয়। একাকী ব্যবহার করা হয় বলে এতে অন্যের বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে হেডফোনের বহুল ব্যবহার বিশেষ করে উচ্চশব্দে বাজানো থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যথায় আমাদের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বর্তমানে তারবিহীন হেডফোন অনেকেই ব্যবহার করে। এগুলো ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের শব্দ শোনায়।

মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর: 

মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর হলো একটি ইলেকট্রো অপটিক্যাল যন্ত্র। এর সাহায্যে কম্পিউটার বা অন্য কোনো ভিডিও উৎস থেকে নেওয়া ডেটা ইমেজে রূপান্তর করা যায়। এ ইমেজ লেন্স পদ্ধতির মাধ্যমে বহুগুণে বিবর্ধিত করে দূরবর্তী দেয়ালে বা স্ক্রিনে ফেলে উজ্জ্বল ইমেজ তৈরি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। আধুনিক প্রজেক্টরগুলো ত্রিমাত্রিক ইমেজও তৈরি করতে সক্ষম।
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সাধারণত প্রেজেন্টেশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্পাইড প্রজেক্টর এবং ওভারহেড প্রজেক্টরের আধুনিক রূপ। এটি ডিজিটাল ইমেজকে যেকোনো সমতলে যেমন- দেয়াল বা ডেস্কের উপর বড় করে ফেলতে সক্ষম। বিশাল সভাকক্ষে ব্যবহারের জন্য এর ঔজ্জ্বল্য এক হাজার থেকে চার হাজার লুমেন্সের হতে হয়। এটি ল্যাম্পের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
এলসিডি প্রজেক্টরগুলোর ল্যাম্প সাধারণত চার হাজার ঘণ্টা ব্যবহারের পর পরিবর্তন করতে হয়। আরেক ধরনের প্রজেক্টর রয়েছে যা এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এগুলোর ল্যাম্প বিশ হাজার ঘণ্টা কাজ করতে পারে। তবে এগুলোর মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কম্পিউটার বা অন্য কোনো উৎস যেমন- টেলিভিশন, সিডি/ডিভিডি প্লেয়ার ইত্যাদি থেকে ইমেজ নিয়ে তা এলসিডিতে সরবরাহ করে। এরপর ইমেজটি একটি লেন্সের মাধ্যমে সমতল পৃষ্ঠের ওপর ফেলা হয়। এজন্য বড় কোনো আসবাবের প্রয়োজন পড়ে না। এলসিডি বা এলইডি প্রজেক্টর আকারে ছোট বলে খুব সহজেই বহনযোগ্য। বর্তমানে পকেট প্রজেক্টর পাওয়া যায় যা কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি বা মোবাইল ফোন থেকে ব্যবহারের সুবিধা দেয়।


Post a Comment

Previous Post Next Post