লোড হচ্ছে...

সর্বশেষ

এলাচ গাছের পরিচয়, এলাচের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

এলাচ গাছের পরিচয় ও উপকারিতা

এলাচ গাছের পরিচয়, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

এলাচ (Cardamom) একটি সুগন্ধিযুক্ত মসলা যা আমাদের দৈনন্দিন রান্না, ওষুধ, পানীয় এবং স্বাস্থ্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু স্বাদের উন্নতি করে না, দেহে নানা ধরনের উপকারও এনে দেয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ, ইউনানি এবং চীনা চিকিৎসা পদ্ধতিতে এলাচকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এলাচ মূলত এর সুগন্ধি বীজের জন্য পরিচিত, তবে এর গাছ, পাতা ও ফল সকলই মূল্যবান।

এলাচ গাছের পরিচয়

এলাচ গাছ একটি বহুবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ যা সাধারণত ৫–১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এলাচ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Elettaria cardamomum। এটি আদা পরিবারের অন্তর্গত। গাছটি দেখতে অনেকটা আদার গাছের মতো। এর লম্বা লম্বা পাতা মাটির কাছ থেকে উঠে আসে এবং ফুলগুলো গুচ্ছাকারে ধরে। গাছের গোড়ায় জন্ম নেওয়া ছোট ছোট ফলের ভিতরেই থাকে মূল্যবান এলাচ বীজ।

এলাচ সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। পাহাড়ি অঞ্চলের ছায়াযুক্ত জায়গায় এর চাষ বেশি হয়। বাংলাদেশে বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে এলাচের চাষ দেখা যায়।

এলাচের পুষ্টিগুণ

এলাচে রয়েছে—

  • ভিটামিন A, B, C
  • ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস
  • এন্টি-অক্সিডেন্ট
  • ফাইবার
  • প্রাকৃতিক তেল (Essential oil)
  • ক্যারিওফিলিন ও লিমোনিন

এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

এলাচের উপকারিতা

১. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

এলাচ হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। খাবারের পর মুখে এলাচ চিবালে অ্যাসিডিটি, বুকজ্বালা, গ্যাস্ট্রিক ও অম্বল কমে। এর মধ্যে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হজমতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে।

২. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

এলাচের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবহার হলো মুখের দুর্গন্ধ দূর করা। এলাচে থাকা সুগন্ধি তেল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং মুখে দীর্ঘ সময় ভালো গন্ধ বজায় রাখে।

৩. সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথায় উপকারী

এলাচের উষ্ণ প্রভাব কফ দূর করতে সাহায্য করে। এলাচ চা গলা ব্যথা, কাশি ও সর্দি কমায়। এতে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

এলাচে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত কম পরিমাণে এলাচ সেবন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

৫. কিডনি পরিষ্কার করে

এলাচ প্রাকৃতিক ডাইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের অতিরিক্ত পানি ও বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। ফলে কিডনি ও মূত্রনালী সুস্থ থাকে।

৬. মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে

এলাচ শরীরকে রিল্যাক্স করে এবং মানসিক চাপ কমায়। তাই এলাচ চা উদ্বেগ, অনিদ্রা ও ক্লান্তি দূর করতে কার্যকর।

৭. ওজন কমাতে সহায়তা করে

এলাচ মেটাবলিজম বাড়ায় এবং চর্বি গলাতে সাহায্য করে। সকালে কুসুম গরম পানির সঙ্গে এলাচ খেলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়।

৮. যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে

প্রাচীন চিকিৎসায় এলাচকে প্রাকৃতিক কামোদ্দীপক বলা হয়। এটি শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং যৌন দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।

এলাচ খাওয়ার নিয়ম

১. সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া

মুখের দুর্গন্ধ, বমিভাব বা বদহজমের জন্য খাবারের পর ১–২টি এলাচ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

২. এলাচ চা

১ কাপ পানিতে ২টি এলাচ হালকা ভেঙে চা দিয়ে ফুটিয়ে নিলে একটি সুগন্ধি ও উপকারী পানীয় তৈরি হয়। এটি কাশি, ঠাণ্ডা, গলা ব্যথা ও উদ্বেগ কমায়।

৩. গরম দুধের সঙ্গে

রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধে সামান্য এলাচ ফেলে খেলে হজম ভালো হয় এবং ঘুম গভীর হয়।

৪. মধুর সঙ্গে এলাচ গুঁড়া

ওজন কমানো ও ঠাণ্ডা লাগার সমস্যায় এলাচ গুঁড়া মধুর সঙ্গে খাওয়া উপকারী।

৫. খাবারে ব্যবহার

বিরিয়ানি, পোলাও, পায়েস, খিচুড়ি ও মিষ্টান্নে এলাচের ব্যবহার স্বাদ ও গন্ধ বাড়ায় এবং শরীরের পুষ্টি জোগায়।

এলাচ খাওয়ার সতর্কতা

  • অতিরিক্ত এলাচ খাওয়া এড়িয়ে চলুন (দিনে ২–৪টির বেশি নয়)
  • গর্ভবতী নারীদের পরিমাণ ঠিক রেখে খাওয়া উচিত
  • কিডনির জটিল রোগীদের অতিরিক্ত এলাচ পরিহার করা ভালো
  • যাদের এলার্জি আছে তারা সাবধানে খাবেন

উপসংহার

এলাচ শুধু রান্নার সুগন্ধি মসলা নয়, এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর ভেষজ উপাদান। এলাচ গাছের প্রতিটি অংশ—পাতা, ফল ও বীজ—স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর। সঠিক নিয়মে এলাচ সেবন করলে হজম থেকে শুরু করে হৃদরোগ, সর্দি-কাশি, মানসিক চাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ—সবক্ষেত্রেই এর অসাধারণ ভূমিকা আছে। তবে যেকোনো ভেষজের মতোই এলাচও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post